Skip to main content

 

111.jpg

নীলিমা সেন। প্রচণ্ড গরমে তেতেপুড়ে এসে চোখে মুখে ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দিলে যেমন লাগে, নীলিমা সেনের গলায় রবীন্দ্রনাথের গান প্রাণে এসে তেমনই অনুভব দিয়ে যায়।

আমার একবারই পরম সৌভাগ্য হয়েছে ওঁকে সামনাসামনি শোনার। পঁচিশে বৈশাখ। জোড়াসাঁকোতে সকালবেলায়। উনি গাইছেন, "ক্ষত যত, ক্ষতি যত"। কাছ থেকেই তো দেখছি। তাকিয়ে আছেন দূরে। কিন্তু যা দেখছেন সে যেন বাইরে নেই। হারমোনিয়াম বাজাচ্ছেন অন্য কেউ। উনি আঙুলের কড়ে তাল রাখছেন। কোনো সাজই নেই। কী নিতান্ত সাদামাটাভাবে বসে আছেন। যেন রান্নাঘর থেকে সদ্য কপালের ঘামটা আঁচলে মুছে, বসার ঘরে এসে বসেছেন, নিজেরই বাড়িতে। গান শোনাতে। ভালোবেসে। মাঝে মাঝে গাইতে গাইতে যখন চোখটা বন্ধ করছেন, বোঝা যাচ্ছে এ গান উনি কার পায়ে নিবেদন করছেন।

তখন সদ্য FM রেডিও এসেছে। কাঁচরপাড়ায় সিগন্যাল পেতে বেগ পেতে হত। তাও প্রবল চেষ্টা থাকত পরিষ্কার আওয়াজে চ্যানেল ধরতে, তার এক বড় কারণ ওঁর গান। ক্যাসেট তো বেশি পাওয়া যেত না। কী একটা চ্যানেলে প্রায়ই ওঁর গান চালানো হত কম্প্যাক্ট ডিস্কে। "বল দাও মোরে বল দাও, প্রাণে দাও মোর শকতি"। এ গানটা শুনতাম আর ভাবতাম, এমন একটা প্রার্থনা এমন দৃঢ়তার সঙ্গে আবার এমন শান্তভাবে গাওয়া যায়?

নীলিমা সেনের গান সেই স্কুল জীবন থেকে আজও আমার সঙ্গী হয়ে আছে। কত দুঃসময়ে, অস্থিরতায়, হতাশায় ওঁর গানের কাছে ফিরে ফিরে গেছি। যাবও। হাওয়া বাতাস, জল, মাটি, গাছের পাতার কাঁপনের মত আড়ম্বরহীন ওঁর গান। এক এক সময় মনে হয়, অমন গভীরভাবে, প্রাণ দিয়ে অনুভূত বিশ্বাসের সঙ্গে গাওয়া গান শোনার অভিজ্ঞতা না হত যদি, তবে হয় তো জীবনের অনেক সত্যের উপরই স্বাভাবিক বিশ্বাস জন্মাত না। সবটাই মনে হত ফাঁকি। নীলিমা সেন মনে করিয়ে যান, জীবনে সব গভীর উদার সত্যের অনুভব ফাঁকি নয়। ফুল ফোটারও একটা সুর আছে। কিন্তু তা শোনার ধৈর্য কই আমার? নীলিমা সেনের গানে তা আছে।

আজ ওঁর জন্মদিনে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই।

https://youtu.be/hxlRv1ufHGM?si=cmxog0u-bvz_ArhA