Skip to main content

 

 

চায়ের জলটা ফুটছিল। গ্যাসটা নিভিয়ে দিল। চা পাতাটা আবার কৌটোতে ভরে রান্নাঘরের আলোটা নিভিয়ে বাইরে এসে বসল। সোফায় বসে পাখাটার দিকে তাকালো। ফুল স্পিডে ঘুরছে? উঠে গিয়ে রেগুলেটারটা ঘোরাতেই পাখাটা বন্ধ হল। ফুল স্পিডেই তো ছিল তবে।

আবার মোবাইলটা অন্‌ করল। ওরা গাড়িতে। ওরা বাইকে। সন্ধ্যের অন্ধকারে এত আলো?

ওদের ঘামের গন্ধ, গলার আওয়াজ, কব্জীর জোর সব মনে আছে। স্পষ্ট। তার শরীর সবটা মনে রেখেছে। বছর তিনেক আগে। হোটেলের ঘরে ঢুকল ওরা। ছিটকে ফেলল তার সঙ্গীকে। মেডিকাল রিপ্রেজেনটেটিভ ছিল। দুপুরে কয়েক ঘন্টার জন্য দেখা করেছিল। রোগা মানুষটা বড় বড় চোখ করে তাকিয়েছিল, হতভম্ব। কুণ্ঠিত। লজ্জিত। কপাল ফেটে রক্ত গড়াচ্ছিল। খুব সম্ভবত টেবিলের কোণায় লেগেছিল। কোণায় কী রক্ত লেগেছিল? তাকে নিয়ে গেল পাশের ঘরে। হোটেলের মালিকও ছিল। আরো চারজন। তারপর?

রক্তের দাগ মনে থাকে। যন্ত্রণা মনে থাকে। অপমান মনে থাকে। ঘেন্না মনে থাকে। নিজের উপর ঘেন্না। জীবনের উপর ঘেন্না। খিদের উপর ঘেন্না। নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আকারে, আকৃতিতে ঘেন্না। সব তাল পাকানো মাংসপিণ্ড। রক্তে মাখা।

ওরা জামিন পেল। ওরাই বেরিয়েছে। উল্লাসে। সন্ধ্যার অন্ধকারে এত আলো! এত আলো!

এখন ওরা অন্য শহরে। সে অন্য শহরে। এখানেও ধর্ষণ হয়। এখানেও খুন হয়। এখানেও মৃত্যু পাগল কুকুরের মত অতর্কিতে কামড়ায়।

সে একা থাকে। এখানে একটা স্কুলে ক্লার্কের কাজ করে। এ ফ্ল্যাটটা ভাড়ার। দেওয়ালে কোনো ছবি নেই। আগে থাকত। পাখির। জঙ্গলের। মা-বাবার। আর গণেশের। এখন শুধু দেওয়াল। ভিতর আর বাইরেকে আড়াল করা দেওয়াল।

মোবাইলটা অফ্‌ করে দিল। সেই যে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ, আর খোঁজেনি কোনোদিন। এরাও খুঁজবে না। ওরা জানে ঘেন্নায় কুঁকড়ে যাওয়া শরীরকে না খুঁজলেও চলে। ওরা তো শকুন নয়। ওরা জীবিত শরীর খোঁজে। যে শরীরে খাবলালে রক্ত বেরোয়, ঘেন্না না। রক্ত আর ঘেন্না একসঙ্গে থাকে না। তার শরীরে রক্ত নেই। বিষ।

আলোগুলো বন্ধ করে দিল। শকুনের অভাব নেই সংসারে। ওরা ধর্ষকদের থেকেও ঘৃণ্য। খুঁজে খুঁজে পচা মাংস বার করবে। ফোনটা অফ্‌ করে দিল।

তিনদিন পরে যখন পাওয়া গেল তাকে, তখন তার একমাত্র পরিচয়, দুর্গন্ধ। সেই পরিচয়ে, তখন কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করেছিল, এ-ই সে না! হোটেলে.... বয়ফ্রেণ্ডের সঙ্গে... ফূর্তি করতে.... তারপর...

শকুনের ভিড়ে হারিয়ে গেল তার পচা শব। ধর্ষকেরা জানতেও পারল না। কিম্বা হয় তো জানতে পারলেও বিশ্বাস করতে পারল না সে এতদিনও বেঁচে থাকতে পেরেছিল!

ক'দিন পর শকুনেরা ফিরে গেল। ভুলে গেল সব, শব ফুরিয়ে যেতে। জগতজুড়ে নতুন ধর্ষক জন্মাল। নতুন নতুন শকুনের দল খুঁজে বেড়াতে লাগল খাদ্য। সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয়ের মাঝখানে যে গল্পরা জন্মায়, তারা সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মধ্যগগনে ওড়া শকুন আর সূর্যকে বলল, একদিন সব আলো নিভে যাবে, কী নিয়ে বাড়ি যাবে, ভেবে দেখেছ?