শিবানী
অকাল সন্ধ্যে
মেঘলা আকাশ। উদ্বেল দীঘির কালো জল। বৃষ্টি ধোয়া গাছের পাতার থেকে এক বিন্দু জল পড়ল দীঘির বুকে - টুপ্। মিলিয়ে গেল। জলের বুকে মেঘের ছায়া।
পাড়ে বসে যে মেয়েটা, সে এ পাড়ায় সদ্য বিয়ে হয়ে এসেছে। এই দুপুরে সে একা বসে ঘাটের সিঁড়িতে। কেউ নেই চারধারে। ফাঁকা জনপথ। ওর কি মন খারাপ? নাকি নতুন সব কিছুর সাথে মানিয়ে নেওয়া লড়াইয়ের ফাঁকে একটু অবকাশ।
প্রতীক্ষা
তোমার কোনো বাস্তব বোধ নেই।"
ঝিলিক কথাটা বলে ঝাঁট দিতে দিতে আড়চোখে একবার শুভায়ুকে দেখে নিল। শুভায়ু খবরের কাগজে ডুবে। মাথাটা না তুলেই বলল, হুঁ।
"কাল মুন্নীর স্কুল থেকে চিঠি দিয়েছে, ওদের এবারের সামার ভ্যাকেশানের ডেটটা কি কারণে যেন এগিয়ে এসেছে। রিজার্ভেশান করেছ?"
শুভায়ু চোখ তুলে বলল, বলোনি তো!
ঝিলিক ঝাঁঝিয়ে উঠল, বলিনি মানে? পরশু থেকে এই নিয়ে তিনবার বললাম।
দেশলাই
রাস্তাটা পেরোলেই দোকান। পরিতোষ তাও যেতে পারছে না। ওর পা যেন কিসে আটকে ধরেছে। কোমর থেকে পায়ের পাতা অবধি ছিঁড়ে যাচ্ছে ব্যাথায়। তবু এক প্যাকেট সিগারেট না হলে চলছেই না।
কালবৈশাখী
আশ্চর্য হওয়ার তো কিছু হয়নি, বলে রণিতা পাশের ঘরে চলে গেল শাড়ি ছাড়তে। রণিতার মা কিছুক্ষণ ছাদ থেকে আনা শুকনো কাপড়গুলো কোলে নিয়ে সোফাটায় বসে রইলেন। জানলা দিয়ে সামনের বড় রাস্তাটা দেখা যায়। দুপুর তিনটে, বৈশাখের কাঠফাটা রোদ। রাস্তাটা শুনশান।
খাঁটি সোনা
গঙ্গার ধারটা বিকালে প্রচুর লোকজন হয় এখন। বিশুপাগলার রাগ হয়। অকারণেই রাগ হয়। এত লোক কেন? আগে তো হত না। সে সবাইকে মুখ খারাপ করে। যেদিন প্রচণ্ড রাগ হয়, সেদিন থুতুও ছিটিয়ে দেয় লোকেদের গায়ে। আর দেবে নাই বা কেন? এই গঙ্গার ধারটা তো জঙ্গলই ছিল। বিশু পাগলা আগে শ্মাশানে থাকত। তা বছর তিরিশ আগের কথা। তারপর এই জলা জঙ্গলটায়। সে আর কালু, হরেন, ডাবলু। এরা সব ওর নেড়ি কুকুরের দল। তারা কোথায় এখন?
নাকছাবি
একলা না
মশারির চারদিকটা ভাল করে গোঁজা হল কিনা দেখতে দেখতে ওনার বেশ কিছুটা সময় কেটে যায়। মাথার কাছে টর্চ, জলের বোতল নিয়ে যখন বিছানায় ঢোকেন, মনে হয় এ যেন তার রাতের সংসার। একা মানুষটা কাটাল দোকা ভাবে সাঁইত্রিশ বছর। তারপর হঠাৎ এখন একা। নিঃসন্তান বলে না, দুর সন্তান বলে। বাইরের দূরত্ব না, ভিতরে।
আত্মপ্রকাশ
আত্মপ্রকাশ কিসে ঘটবে? বেলুচিস্তান না কাশ্মীরে?
পদাদা রোজ ব্রাশ করতে করতে এটা ভাবে। হনলুলু না গোবরডাঙা? কিম্বা বনগাঁ না ক্রৌঞ্চদ্বীপ?
পদাদা এমনিতে হাসিখুশী মানুষ। রাগিয়ে দিলে তুবড়ি। হাসিয়ে দিলে চরকী। ভাবিয়ে দিলে রকেট। বয়েস পঞ্চান্ন। দুই ছেলের বাপ। এক স্ত্রী'র স্বামী।
সোজা কথা
আঁকাবাঁকা কিছু কথায় তুমি সোজা কথাটা ছুঁতে চাও। সোজা কথাটা সিঁড়ির নীচে, ছাদে, হাবুলের চায়ের দোকানের কোণে থাকে লুকিয়ে। তুমি ঘুমিয়ে পড়লে, তোমার বুকের ওপর একলা একলা বেয়ে ওঠে, কেন্নোর মত। কখনো বা সার দেওয়া পিঁপড়ের সারির মত। তুমি ঘুমের মধ্যে টের পাও - সোজা কথাটা তোমার বুকে। সকাল হয়। তুমি হারিয়ে ফেলো।