Skip to main content

বডি

বাজারটা থমথম করছে এখনও। পুলিশ এখনও বডি নিতে আসেনি। ছেলেটাকে এদিকে কেউ আগে দেখেছে বলেও চিনতে পারছে না। কিন্তু এরকম দিন দুপুরে খুন এই তল্লাটে আগে কবে হয়েছে মনে করতে পারছেন না বিশ্বনাথ দাস। বাজারের ব্যাগটা হাতে নিয়ে, ভুরু কুঁচকিয়ে পরেশের চায়ের দোকানে বসে আছেন।
...

সুবর্ণ

ছেলেটা মেয়েজাতটাকে ভালোবাসতে পারতো না, তাই শ্রদ্ধা করত প্রাণের সমস্ত শক্তি দিয়ে। কারণ যাকেই না শ্রদ্ধা করি তা-ই বিরুদ্ধ শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। মেয়েজাতের মত এত বড় একটা শক্তিকে বিরুদ্ধসত্তা বানিয়ে লড়তে চাইলে মনের শান্তি বিঘ্নিত হয়। তাই সুবর্ণ মেয়েদের শ্রদ্ধা করত। সে নিজেও কারণটা স্পষ্ট বুঝত না যদিও। কিন্তু সে খেয়াল করত মেয়েদের নারীরূপটা সে মেনে নিতে পারে না। সেটা যেন পাশ্চাত্য সভ্যতার একটা বিকাররূপ তার কাছে। মেয়ে মানে মা। মেয়ে মানে একটা আশ্রয়। এমনকি ভারতীয় মেয়েদের পর্ণও দেখলে অসহ্য লাগত সুবর্ণ'র। ওরকম হয় না ভারতীয় মেয়েরা।

ভবাকান্তবাবু

ভবাকান্ত দুপুরে ভাত আর অল্প একটু ডাল তরকারি খেলেন। বাইরের বারান্দাটায় এখন রোদ। খেয়ে উঠে বসবেন। খাওয়ার থেকে রোদে বসার তাড়া বেশি। 
        গায়ে একটা শাল। শালটার বয়েস পঁচিশ। তার বয়েস একাশি। চেয়ারে বসলেন। মুখটা রোদের বাইরে রেখে চোখ বুজে শুলেন। মাইকের গান আসছে "চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে জো দিলকো"। সামনের ক্লাবে চলছে। উপরে পতাকা, নীচে নেতাজি। চারদিকে চারটে দড়ি। তাতে ছোটো ছোটো পতাকা। যাননি এবার দেখতে, তবু জানেন। নেতাজির জিলিপি খেতেও মন চায়নি। অম্বল হয়। কম দামী তেলে ভাজা। 
...

আগাছা

গাছটার নাম জানি না। এক হাত তার দৈর্ঘ্য হবে। ফুলের বালাই নেই। কয়েকটা শ্রীহীন এবড়ো খেবড়ো সবুজ পাতা আর খয়েরি খয়েরি সরু লিকলিকে কান্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েক মাস হল মাটির উপরে। মাড়িয়ে গেলেই হয়, এমনই বিপদসঙ্কুল অবস্থান তার। চোখে পড়ার মত কোনো গুণ নেই, কিন্তু পায়ে আটকাবার মত পাতার খোঁচা তার।
...

পর্ণা

পর্ণা সানন্দাটা ভাঁজ করে কোলের উপর রাখতেই চমকে উঠল, সামনের প্ল্যাটফর্মে অনিকেত। অনিকেত দেখেনি। একটা চেয়ারে বসে খবরের কাগজে ডুবে আছে। সেই পুরোনো অভ্যাস।
        পর্ণা শ্যামনগর যাবে। সেখানে একটা হাইস্কুলে ভূগোল পড়ায়। পর্ণার ডিভোর্স হয়েছে বছর নয়-দশ হল। বিয়ে অনেক কম বয়সে হয়। তখন পর্ণা সদ্য গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে। অনিকেতরাও নাগেরবাজারেই থাকত। তার থেকে বছর তিনেকের বড়, সদ্য মার্কেটিং এগজিকিউটিভের চাকরি পেয়েছিল একটা ওষুধ কম্প্যানীতে।
...

ঝাঁটা

রোজ সকালে আধঘন্টা ধরে ঝুঁকে পুরো উঠোনটা ঝাঁট দিতে হয় রুকমির মাকে। আজ পঁচিশ বছর ধরে দিয়ে আসছে। তার আগে তার শাশুড়ি দিত - অশোকের মা। 
        রুকমির মায়ের অসহ্য লাগে। শরীরখারাপের সময়টা আর শীতের সময়টা। ভেবেছিলো অশোকের মা ঘাটে উঠলে এই ঝাঁটা দেওয়ার চলটা উঠিয়ে দেবে। মাসে একবার কি দুবার দেবে। শরীরখারাপের পর আর কম শীতের সময় বাদ দিয়ে।
...

সন্ন্যাসী

সন্ন্যাসী ঘাটে এসে দেখলো, ঘাটে একটাই নৌকো বাঁধা। কারা দুজন যেন মুখোমুখি বসে। কুয়াশায় অস্পষ্ট চারদিক। গভীর সংশয়ের মত শীত। সে নৌকার আরো কাছে এলো। নৌকায় ঈশ্বর আর এক যুবতী মুখোমুখি বসে।
...

রামধনু

ছেলেটা কাদা মেখে পাড়ে উঠল। হাতে কয়েকটা শালুক ফুল। বাজারে যাবে। পরনের গামছাটা খুলে পাড়েই নিংড়ে নিল। লোকজন কেউ নেই। তার লজ্জাও কম। বয়েস বারো। বাবার সাইকেল সরানোর দোকান। মা ঠিকে ঝি। সে এক ছেলে। 
...

রক্তবাহ


রাস্তাটা ক্রমশ ছোটো হতে শুরু করেছে। সামনের দিকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না প্রায়। তবু হাতড়াতে হাতড়াতে মানুষটা এগোচ্ছে। আচমকাই রাস্তাটার মাঝখান থেকে দুটো টুকরো হয়ে গিয়ে লোকটা তলিয়ে গেল।

জুতো

কলিংবেল বাজল। রাত এগারোটা। ছেলেটা দরজা খুলে বাইরে কাউকে দেখতে পেলো না। এদিক ওদিক তাকিয়ে দরজাটা বন্ধ করতে গিয়ে খেয়াল করল, সামনের সিঁড়িতে দু'পাটি জুতো রাখা। ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে কিছু মনে করার চেষ্টা করল। পারল না। দরজাটা বন্ধ করে টিভির সামনে এসে বসল। টিভিটা চলছিলই।

Subscribe to অনুগল্প