মানুষ সুখকে, স্বস্তিকে, উৎসবকে, আনন্দকে আবর্তে চায়। ফিরে ফিরে আসুক। নাগরদোলায় ঘুরতে ঘুরতে বারবার ছুঁয়ে যাক সুখের বাগান। আসুক শীতল বাতাস। আমি ঘুরে যাই। সকাল থেকে রাত আমার নিয়মে বাঁধা। আমি আবর্তকারে ঘুরে যাই। প্রতিদিন আমার কাছে প্রতিদিনেরই মতন। আমি যদি একটা আবর্ত ভাঙি, আমার আরেকটা আবর্ত চাই। আমি বেড়াতে গেলেও নিয়ম বানাই। সেখানেও আরেকটা আবর্ত বানাই। মানুষের দেহের আশ্রয় ইট-মাটির বাড়ি। মনের আশ্রয় আবর্ত। সংসারীর আবর্ত, সন্ন্যাসীর আবর্ত, উদাসীনের আবর্ত, ভিখারির আবর্ত। রাতদিন ঘুরে চলেছে মানুষ। ঘুরতে ঘুরতে একদিন মনে হয়, এ ঘোরা হয় তো অনন্তকাল ধরে চলবে। কেউ দাঁড়াবে না কোথাও। আজ যেমনটা হয়েছে, কাল আবার হবে। আজ যে সুখ আমার হাতে দানা খেয়ে গেছে, কাল সে আবার আসবে উড়ে। সব সময় হয় না। আবর্তের গতি কমে আসে। অপেক্ষা বাড়ে। ঘুরতে ঘুরতে চারদিকে তীক্ষ্ম নজর। ভুল হল কোথাও? হয়নি। আবর্তের কেন্দ্রে যে আমি, সে সরে এসেছে। সে সরে সরে যাচ্ছে। আবর্তের মধ্যে থেকে সেটা বোঝা যায় না। কিন্তু সে সরে সরে যাচ্ছে। তার বৃত্তও সরে সরে যাচ্ছে। সুখ দুঃখ সে আবর্তে কুয়াশার মত, মেঘের মত, বৃষ্টির মত, দাবদাহের মত আসছে যাচ্ছে। এক এক দিন এক একটা আবর্ত হারিয়ে যায়। যেমন আকাশের তারা হারিয়ে যায়। সে আবর্তের ছন্দ জেগে থাকে কিছুদিন। কার আবর্ত কতদিন জাগবে নির্ভর করে সে আবর্তে সে কতটা অমৃত, কতটা গরল মন্থন করেছে তার উপর। হ্যাঁ, এ আবর্তই সে আবর্ত, সে আবর্তে মন্থন চলছে। যত বড় মানুষ তার মন্থন ক্ষমতা তত বড়। যত বড় মহাপ্রাণ তার ডান হাতে ধরা অমৃত, আর কণ্ঠে রাখা গরলের পরিমাণও ততটাই। সে মানুষ ফিরে গেলে, সে আবর্ত হারিয়ে গেলেও সাধারণ মানুষ বারবার সে আবর্তের কাছে দাঁড়ায়। পড়ে থাকা অমৃতের খোঁজে। এক বিন্দু, কী দুই বিন্দু যদি পাই! আমার আবর্তে যদি তোমার আবর্তের আশীর্বাদ পাই!