জল এনে দাও। থাক, জল থাক। গীতাটা পড়ো। থাক গীতা পড়ে কী হবে, কোনদিন ধর্মকর্ম মানল? বরং ওর বউকে বলো কিশোরকুমার চালাক। কারেন্ট নেই না। কী ভাগ্য মানুষটার। আজীবন বাসে “টিকিট টিকিট” করে মরল….আজ নিজেরই যখন টিকিট কাটার সময় হল কিশোরকুমারের একটা গানও শুনতে পেল না…কারেন্ট নেই কেন? ট্রান্সফরমার পাল্টাচ্ছে…..ও….আচ্ছা।
দাদুকে দেখে এসো। বাবাকে দেখে এসো। দাদাকে দেখে এসো।
উঠবে না? বেশ। অবশ্য তিনতলায়। নামাবে কী করে? এও এক ঝক্কি। বলেছিলাম, নীচের ঘরে রাখো….কিন্তু বুড়িমাগী….বলে এই ঘরটা প্রিয় ছিল….আরে….ভাড়া বাড়ির আবার প্রিয় অপ্রিয়…..আমি তো গরম বলে উপরের ঘরে গেলাম না…..কিন্তু…. ও ঠিক নামিয়ে নেবে….রবিবার… পাড়ার ছেলেরা তো আছে….আজ কী বই দিয়েছে গো….বিকেলে? সাড়েচুয়াত্তুর? আবার? এই তিনমাস আগেই দিল না? হ্যাঁ গো উপরে সব শান্ত কেন?..... দাঁড়াও যাই….মাংস বসিয়েছি….আজকাল ঘুঁটের যা ছিরি….ফুটুক…আজ খেয়ে নাও….নইলে আবার তো সেই দু হপ্তা….
চোখ দুটো স্থির। সিলিং এ আটকে। কী ঝুল বাবা! ঝাড়ে না কেন কে জানে! থাকত তো বুড়োবুড়ি….কাজের মেয়েটাকে দুটো টাকা দিলেই করে দিত….তা দেবে না….কিপটে…বললে বলবে, ওষুধ কিনতে হয় না…..
বুড়ি অমন স্থির হয়ে বসে কেন? কাঁদছে না। কী পড়ছে? আনন্দলোক? আরে ওর কি মাথাটা গেল? ছি ছি….লোকে কী বলবে? মা….ও মা….বাইরের লোকজন সব আসবে…..এ কী পড়ছেন?.....গীতাটা পড়লেও না হলে হত….আনব?
তুমি পড়ো বউমা….আমার দুদিন হল পড়া হয়নি….পড়ে নিই….রাতে যা আলোর ছিরি….সুচিত্রাকে “প্রণয়পাশায়” কী বাজে লাগছে…..ছবিটা দেখো….কেন যে করতে গেলেন….সব চাইতে অদ্ভুত লাগত ‘বিপাশায়’….নাকি?
মা তুলসীপাতা…চোখে দেয় না…..
আনিয়ে রেখেছি…মেয়ে চন্দন বাটছে….আনছে….একটু চা করতে বলেছিলাম…..দেখো তো…..
–------
–-------
–----------
ওরা বাঁধল তো ভালো করে…..রাস্তায় পড়বে নইলে…..কী ধুপ গো…ম্যাগো…কী বাজে গন্ধ…..ওদের বেরোতে বলো…..কে গো এটা? কে?
বুড়ি শালা নিজের ছেলেকে চিনতে পারছে না…..পারবেই বা কী করে…..বয়েসের তো গাছপাথর নেই….ওকে আনলই বা কেন……
ও কে গো? হ্যাঁ গো….বউমা…. কে ও?
পাড়ার একজন মা…..
আমার ছেলে বলছে ওরা….তাই?
তাই হয় মা?….সে তো যশোর রোডে বাসের কণ্ডাক্টর মা…..কাজে গেছে…..
সেই যশোর রোড দিয়ে আমরা এসেছিলাম পাকিস্তান ছেড়ে মা….আমার কজন ছেলেমেয়ে ছিল যেন বউমা?
ছজন মা……
সবাই বেঁচে আছে বউমা…..
সবাই বেঁচে আছে মা…..( আছে দুজন। যে গেল তার পরের ভাইটা…আর সব চাইতে ছোট বোনটা)
ওদের নিয়ে যেতে বলো….আমাদের বাড়ির সামনে অন্যের মড়া রেখেছেই বা কেন…..নিয়ে যেতে বলো…..আর তুমি বাড়িতে এসে বলো তো…এ আমার রন্টু না…..সে যশোর রোডে বাসে টিকিট দিচ্ছে….বলো তো….এসো….তুমিও ভিতরে এসো…..দাঁড়িয়ে থেকো না…..তোমার ক'টা ছেলেমেয়ে বউমা……
এ বুড়ির মাকে ছাড়া কাউকে মনে থাকে না….কী আশ্চর্য না দিদি…..আমি ওদের খাইয়ে দিলাম….আজ মাটন করেছিলাম…..তুমি? ডিম? আচ্ছা…খাইয়ে দিয়েছ তো?.....আরে হ্যাঁ আমিও লুকিয়ে লুকিয়ে খাওয়াব….. কী বলব দিদি….আনন্দলোক পড়ছিল….পাশে বাবা শুয়ে…..ওদের আসতে কতক্ষণ লাগবে বলো তো…..বিকেলটা একটু বেরোব…..আমার বোনের নাটক আছে দিদি….যাবে? টিকিট লাগবে না……
বউমা….আমি উপরে এলাম…..আমাকে ডেকো না….ওরা এলে লোহা, আগুন আর নিমপাতা ছুঁইয়ে ভিতরে নিয়ে এসো….আমাকে ডেকো না….আমি স্নান করে শুলাম…..আর আমার থালায় মাছের এঁটোকাঁটা কিছু আছে….ওগুলো মেয়েটা কাজ করতে এলে বোলো তো বেড়ালটাকে দিয়ে দিতে….আর শোনো….কাউকে কোনো নিয়ম মানতে হবে না…..আমি আর তোমার বাবা কেউ পছন্দ করতাম না…..আর শোনো মাকে রোজ যেমন মাছ দেওয়া হয় চটকে….তেমনই দেবে….আর ওর চলে যাওয়ার কথা ওঁকে যেন কেউ না বলে….
দিদি অমঙ্গল হবে না তো…. .দিদি…. মাথাটা কী…. ও দিদি বসে পড়লে কেন….দিদি….সত্যিই কী মাথাটা……. বলো…. উত্তর দিচ্ছ না কেন??.... দিদি…. ও দিদি…..