কালো ঘন মেঘ। কুকুরটা জানে না এখনই বৃষ্টি নামবে। মাঠের মাঝখানে শুয়ে। বৃষ্টি নামল। সে দৌড়ালো। ভিজে শরীরে গাছতলায় দাঁড়িয়ে গা ঝাড়া দিল। বৃষ্টি নামল জোরে। একজন বৃদ্ধ গাছে হেলান দিয়ে বসে। বিড়ি জ্বলছে হাতের আঙুলের ফাঁকে। কুকুরটাকে জিজ্ঞাসা করল, ভিজলি তো? আগে থাকতে বুঝিস না কেন…বুঝি না।
বিদুৎ চমকালো। আলো ঝলমল করে উঠল। বৃদ্ধ বলল, বাজ পড়ল। শুনলি বোকা? কুকুরটা বৃদ্ধের গায়ের গন্ধ শুঁকতে লাগল। একটা টিয়া এসে বৃদ্ধের পাশে বসল। বৃদ্ধ বলল, খাঁচা খুলে দিল? মর এবার! কী যে ওড়ার শখ তোদের! ভালো খেতে পাচ্ছিলি দু'বেলা, সইবে কেন?
সাইকেলটা নিয়ে হুড়মুড় করে মা বাপ মরা ছেলেটা এসে উপস্থিত। আপাদমস্তক ভিজে। দোকানে কাজ করে। মালের টাকা দিতে গিয়েছিল। বৃদ্ধ বলল, খাওয়া হয়নি এখনও তো। আমার কাছেও কিছু নেই।
বউ এলো। ভালো না সে। সমাজ বলে। বৃদ্ধ বলল, ছেলের স্কুলের টাকা জোগাড় হয়েছে? কাল দেখলাম তোর বরকে। নর্দমায় মুখ গুঁজে পড়ে। আমার কি টেনে তোলার জোর আছে? অত রাতে কাকে পাই? তার উপর নেশায় আচ্ছন্ন শরীর ওর।
আরো এ সে এলো। বৃদ্ধ সবার সঙ্গে কথা বলল। একাই বলল। শেষে এক সন্ন্যাসী এলো। বৃদ্ধ বলল, এখানে বড় ভিড়, অন্য কোথাও যাও। আমাদের গন্ধ ভালো না। যে পথে এগিয়েছ, বাধা পড়তে পারে। যাও যাও।
সন্ন্যাসী গেল না। তীক্ষ্ম নজরে সবাইকে দেখতে লাগল। এমন সময় বাজ পড়ল জোরে। সন্ন্যাসী চোখ বন্ধ করে জপ শুরু করল। বৃদ্ধ হাসল।
এমন সময় এলো এক ডোম। বলল, সব কাঠ ভিজে গেল। এমন অসময়ে এলো বৃষ্টিটা। চারজন লাইনে আছে।
সন্ন্যাসী বলল, এত মৃত্যু দেখ, বৈরাগ্য হয় না? তোমার শ্বাসে মদের গন্ধ।
ডোম বলল, বৈরাগ্য কী?
সন্ন্যাসী বলল, থাক। ভস্মতে ঘি।
বৃদ্ধ বলল, হ্যাঁ, সেই কথাই বলছি। যাও যাও। এখানে দাঁড়িও না। বাজ পড়ে যদি সবাই মরি, যম ভুল করে তোমাকেও আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাবে।
সন্ন্যাসী চমকে উঠল। বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে গেল। ডোম বলল, ও চলে গেল কেন?
বৃদ্ধ বলল, আগুন খুঁজতে। ঘি ঢালবে।
ডোম বলল, আগুন আর ঘি তো আমাদের কাজে লাগে। বৈরাগ্য না কী যেন বলছিল লোকটা?
বৃদ্ধ বলল, বৃষ্টি কী ধরল?
বউ বলল, না। মা বাপ মরা ছেলেটা বলল, না। কুকুরটা আরো কাছে এসে দাঁড়ালো। ডোম মড়া জ্বালানোর দুটো হাত বৃষ্টিতে বার করল, বলল, আহ! কী ঠান্ডা জল গো। তাই মানুষ মরলে জুড়ায়। স্বর্গের জল!
বউ বলল, এই বৃষ্টি মাথায় করে সন্ন্যাসী যে কোথায় গেল! কী কাণ্ডজ্ঞানহীন লোকরে বাবা! টিয়া পাখিটা দুবার ডানা ঝাপটে ডোমের কাঁধে গিয়ে বসল।