মার্জনা
সবচাইতে বড় আড়াল নিজের সাথে নিজের আড়াল। যে করেই হোক নিজের মুখোমুখি হতেই হবে। যা কিছু পাপ, তাকে মাথা নীচু করে স্বীকার করে, জোড় হাত করে নিজের অন্তর্যামীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে।
সুখ ও আনন্দ
আনন্দ আর সুখের পার্থক্যটা হল খোলা হাওয়া আর পাখার হাওয়ার মত।
পাখার হাওয়া পেতে আমার কিছু শর্ত আছে। একটা ঘর চাই, পাখা চাই, তার চাই, সুইচ চাই, সর্বোপরি বিদ্যুৎ চাই। তবে গিয়ে পাখার হাওয়া।
শুধু তাই না। পাখার নীচে যদি কেউ বসে, তাকে তাড়াবার কৌশলও ভাবতে হয়। সুখ এমন ধারাই। অন্যকে তাড়াতে চায়। না হলে তার নিজের ভাগে কম পড়ে।
মন
সবাই বলল মনটাকে শক্ত করো। উনুনে আঁচ দিয়ে, তাতে ঘুঁটে, কাঠ কয়লা সব ঢাললাম। আঁচ গনগন করে উঠল। মনকে চড়ালাম। শক্ত হল। শক্ত হল, শুধু বাইরেটাই। ভিতরে একটুও আঁচ ঢুকল না।
বাইরেটা এত শক্ত এখন, যে বৃষ্টির ছিটে বাইরে আসে না, কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ কান পাতলেও বাইরে থেকে শোনা যায় না, ঝড়ের দাপটও শুধু ভিতরেই আছাড় খেয়ে মরে।
ভাল ও খারাপ
এমনটা অনেকবার হয়েছে। কোনো একজনকে খুব খারাপ ভেবে তাকে আমার বাগানে খুব চোখে চোখে রেখেছি। যেই না চোখের আড়াল করেছি, অমনি সে হয়তো গাছের একটা ডাল মট করে ভেঙে দিয়ে পালাল। আমি ভেবেছিলাম সে হয়তো সুযোগ পেলেই সব গাছগুলো উপড়ে ফেলবে বা বাগানে গরু ঢুকিয়ে সব নষ্ট করবে। তা না, শুধু একটা ডাল!
প্রেম ও কাম
একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা
একাকীত্বের সাথে নিঃসঙ্গতা রোজই সকালে বেরোয় বেড়াতে।
একাকীত্ব নিয়ে আসে মুঠো ভরা ফুল, চোখ ভরা বিস্ময় আর বুক ভরা গান।
নিঃসঙ্গতা নিয়ে আসে মুঠো ভরা ধুলো, চোখ ভরা ঈর্ষা আর বুক ভরা দীর্ঘশ্বাস।
আমি বলি কেন এই রকমই হবে?
পৃথিবী
প্রতিটা মানুষ তার একটা নিজের পৃথিবী নিয়ে ফেরে। তাতে তার নিজস্ব নদী, পাহাড়, বন, সমুদ্র সব আছে। তার হাতে লাগানো বাগান আছে, তার হাতে তৈরী ঘর আছে। সে পৃথিবীতেও তার বাইরের পৃথিবীর মতই ঋতু পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্মের তাপ যেমন লাগে, বসন্তে ফুলও তেমন ফোটে। বর্ষা যেমন প্লাবন আনে, শীত তেমন কুয়াশাতেও ঢাকে।
টিফিন বক্স
যখন স্কুলে পড়তাম, টিফিন বক্সের একটা রহস্য ছিল। মা কি টিফিন দিয়েছেন আজ? ম্যাগী না পরোটা? চাউ না রুটি? না সুজি? না অন্য কিছু!
আজও টিফিন বক্সের ঢাকনা খুলছি প্রতিদিনের মোড়কে। রোজই ভাবি, আজ কি এনেছে আমার জন্য? ঠোঁটের কোণে হাসি, না চোখ জ্বালা ধরা ব্যাথা? নাকি পাঁচ মিশালি তরকারী?
যাই আনুক, নিতে হবে হাসি মুখেই, পরের দিনের দিকে তাকিয়ে।
তবু
ভয়ের জিনিসকে যত সহজে বিশ্বাস হয়, অভয়কে তত সহজে বিশ্বাস হয় কই? তুলসীদাসজী বলছেন, অমৃত সারা জীবন কানেই শুনে এলাম, চোখে পড়ল শুধু বিষ।
এ অভিজ্ঞতা কার জীবনে না নেই। তবু নিজের সামনে যখন দাঁড়াই, প্রশ্ন করি তোমার এ সংসারে চলার পুঁজি কি? মন বলে, কিছু ভাল কাজ করার ইচ্ছা। হ্যাঁ, এইটাই আজ থেকে কাল, কাল থেকে পরশু হাত ধরে নিয়ে চলেছে।
সম্পদ
সব সম্পদ সিন্দুকে, লকারে, আলমারীতে রাখা যায় না। কিছু সম্পদ বুকের মধ্যেও সযত্নে রাখতে হয়। বন্ধুত্ব, বিশ্বাস, ভালোবাসা - এ সম্পদ চুরি হয় না, যদি না আমি হারিয়ে ফেলি।
সব ফসল ক্ষেতেই জন্মায় না। কিছু জীবনেও জন্মায়। উপলব্ধির ফসল ছাড়া জীবন রিক্ত। সাধক রামপ্রসাদের সেই বিখ্যাত গান আছে না- 'এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা'।