অনুগল্প

টিউশন ব্যাচে যাওয়ার সময়ই প্রচন্ড মেঘ করে এসেছিল। তখন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা হবে, সেদিন ব্যাচে টেস্ট ছিলো। পরীক্ষা দিতে দিতেই শুনলাম বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। একটু টেনশান হতে শুরু করলো, আমাদের ওদিকটায় একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জল জমে যায়, আর এ যা বৃষ্টি হচ্ছে তাতে তো নদী হয়ে যাবে। পড়ার ব্যাচ থেকে বেরোলাম নটা চল্লিশ।
...

নীল ফ্রক। পায়ে একটা নীল জুতো। চুলে একটা নীল ফিতে বাঁধা। পার্কে বেঞ্চে বসে। বয়েস নয় বছর, চার মাস, তিনদিন। ফ্রকের গা ছুঁয়ে কাঠের বেঞ্চে শোয়ানো একটা নীল ছাতা।

   একজন বয়স্ক মানুষ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে তার দিকে।
...

চায়ের দোকানের সামনে অল্প অল্প ভিড়। একটা বড় টিনের কৌটো নিয়ে রোগা একটা মানুষ টিউবলাইটের নীচে দাঁড়ালো। কিছু মানুষ আছে না, যারা কথা না বলে থাকতে পারে না, এ-ও সেই গোছের। আমি বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে, তবু সে হেসে হেসে আমার দিকে তাকিয়েই বলতে শুরু করল, দুপুরে খুব খিদে পেল বুঝলেন... অত দুপুরে এই করুনার সময় কে আমার জন্য হোটেল খুলে ভাতের থালা নিয়ে বসে আছে বলুন? আমি এই থেকেই টপাটপ দুটো ইডলি তুলে খেয়ে নিলাম...
...

সন্ন্যাসী মুখে চোখে জল দিলেন। পাহাড়ি নদী। নির্জন। জঙ্গল আশেপাশে। রোদের আলোয় পিঠ দিয়ে পাথরের উপর বসলেন।

সামনের জঙ্গলে একজন অশরীরী অতৃপ্ত আত্মা থাকত। সে সন্ন্যাসীকে একা বসে থাকতে দেখে তার কাছে এলো।

সন্ন্যাসী জিজ্ঞাসা করলেন, কিছু বলবে?

আত্মা জিজ্ঞাসা করল, আমি সারাটা জীবন বেঁচে ঠিক করতে পারলাম না, সুখ কি? আপনি কিছু জেনেছেন?
...

আমার নাকের পাশে, ডানদিকে একটা তিল আছে। এই যেমন আয়নায় আমার মুখটা, ভালো লাগছে না? আমার মনে হয় আমায় সুন্দর দেখাচ্ছে। এখনও মনে হচ্ছে। সব সময় মনে হয়।

   “তোর হল? আর কতক্ষণ লাগাবি বাপ আমার?”

   মা ডাকছেন। আমার সুন্দরী মা। স্মার্ট মা। মা সব জানেন। সব পারেন। আমরা বিয়েবাড়ি যাচ্ছি।
...

যখন সে জানলো যে পুবদিকে সোনা, পশ্চিমে হীরে, দক্ষিণে মুক্তো আর উত্তরে মণি নেই, তখন সে যতটা না হতাশ হল, তার থেকে বিষণ্ণ হল বেশি, এতদিন এতগুলো মিথ্যা তাকে শেখানো হয়েছিল আর সে নিজে বিশ্বাস করেছিল বলে।

একজন তাকে জিজ্ঞাসা করল, তোমার কোনোদিন সন্দেহ হয়নি?

লোকটা বলল - না, ওরা বলেছিল সন্দেহ করা পাপ!
...

দাঁড়ান আমিও ফিরব...


দাঁড়ালাম। উনি দোকানের ঝাঁপ নামিয়ে একগাল হেসে বললেন, শীতটা জম্পেশ পড়ল কিন্তু বলুন?

আমি সামনের পুকুরের জলে চাঁদের ছায়া দেখতে দেখতে মনে মনে একটা গান গুনগুন করতে করতে ভাবছি, গ্রামের দিকে থাকলে এসব দৃশ্য দেখা যায়.. আর কলকাতায়... রাত আর দিনে তফাত শুধু ঘুমে... ধুর...
...

লোকটা পাতকুয়োয় পড়ে গেল। কবে পড়ে গেল, কি করে পড়ে গেল সেটা কথা না। সেটা নিয়ে গল্পও না, মোদ্দা কথা হল লোকটা পড়ে গেল।

   একটা দড়ি নামালো কেউ। লোকটার ভারি আনন্দ হল, সে ভাবল সারা জগতটা হয় তো ওই দড়ি বেয়ে নেমে জড়ো হবে ওই কুয়োতে। সব সুখ, সব আলো, সব আনন্দ... সব সব সব কিছু।
...

"আজ রুটি করতে ইচ্ছা করছে না... তরকারি সকালের যা আছে হয়ে যাবে... বাজার থেকে একটু রুটিটা নিয়ে চলে আসবে?....."

দুটো ঘর। চার-পা বেশি হাঁটলেই দেওয়াল। বারান্দা মানে সরু গলি। খোলা হাওয়া বলতে বড় রাস্তায় খেলে বেড়ানো হাওয়া সরু গলিতে ঢোকে যেটুকু, সেটুকুই। কালো-নীল ছাপ ছাপ একটা নাইটি আর লালে কালো ফুল আঁকা একটা নাইটি - এই দুটোতেই নিজেকে দেখতে দেখতে চোখে অন্য রঙ যেন আর সহ্য হয় না রাখির।
...

   আসলে কেউ বোকা না। কেউ কেউ বোকা সেজে থাকে।

   মাথার উপর ফ্যানটা ধীরে ধীরে ঘুরছে। লোকটার বেডের নাম্বার ৩৬। কতদিন হল ভর্তি মনে নেই। ডাক্তার, নার্স কারোর মনে নেই। খাতাটা ইঁদুরে কেটেছে। সেই খাতায় ভর্তির তারিখ, রোগের নাম, জ্বর আসার সময়, রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট – সব লেখা ছিল।
...