অনুগল্প

ফুলগাছগুলোতে সবে কুঁড়ি এসেছে, আর তুমি কিনা বেড়াতে যাওয়ার টিকিট কেটে আনলে!
আচ্ছা বলো তো, কি করে আমি এই উঠোন ছেড়ে, সমুদ্রের ধারে যাই!
বললেই বলবে, ঘরকুনো! আরে ওরাও তো কত সাধ করে আমার উঠানে বেড়াতেই এসেছে বলো! ছেড়ে যাই কি করে!

মেয়েটার সেদিন সন্ধ্যামালতী ফুল দেখতে ইচ্ছা করছিল। ফুলটা না দেখতে পেলে সে যেন মরেই যাবে আজ। সত্যিই মরে যাবে।

আমায় অন্যমনস্ক করল তোমার ডাক। আমায় ভাবালো তোমার ডাক। আমায় আমার সামনে দাঁড় করালো তোমার ডাক।

ছেলেটা হোয়াটস অ্যাপ থেকে চোখ তুলে স্টেশানে তাকালো। অফিস থেকে ফেরার সময় রোজ এই সময়টা তার ওর সাথে কথা হয় ঘন্টাখানেক। মানে শিয়ালদহ থেকে পৌঁছাতে যতটা সময় লাগে আর কি।
স্টেশানের অন্ধকারে আলোতে তার নিজেকে দাঁড়ানো মনে হয়। আর কিছুটা দূরে ওকে। ওকে মানে, যে এখন ন'বছর হল তার স্ত্রী। প্রেমিকা ছিল চার বছর।

অনেক সময় পরিত্যক্ত মগটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। জল ভরার ক্ষমতা না থাকার খবরটা ওর কানে কেউ তুললেও বিশ্বাস করে না। আমি যতবার ওকে ভাগাড়ে রেখে আসি, ততবার ও হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে আমার বাড়ির উঠোনে এসে বসে থাকে। তাকিয়ে থাকে। মুখে এখনো সেই আত্মবিশ্বাস - আমি পারব, তুমি জল ভরেই দেখো না।

ছ'টা বেজে গেছে। শ্যামনগরের জগোদ্ধারণ ক্লাবের অনুষ্ঠান আজ। রবীন্দ্রসন্ধ্যা। মে মাসের দশ তারিখ। কিছুক্ষণ আগে কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। প্যাচপেচে গরম। ক্লাবের সেক্রেটারি পানুহরিবাবুর সিল্কের পাঞ্জাবী ভিজে চপচপ। বয়েস ষাট ছুঁইছুঁই। গত উনিশ বছর ধরে উনিই সেক্রেটারি আছেন।

তোমায় প্রথমবার কোথায় দেখলাম? বলব না। তোমায় দেখলাম। তুমি দেখলে না। কারণ তখনও তুমি, তোমার তুমি নও। তখনও তুমি নির্ভুল তুমি। আমার তখন ডানে বামে ভুল, উঠতে বসতে ভুল, ঘুমে জেগে থাকায় ভুল। সেই ভুলেই আমি প্রথম তোমায় চিনলাম।

গভীর রাত। দূরপাল্লার ট্রেন। স্লিপার কোচের নীচের বার্থে সিট। ঘুম ভেঙে গেল। জানি না কত রাত। ঘড়ি দেখতে ইচ্ছা করল না। থাক। রাত তো রাত। কত রাত জেনে তো দরকার নেই।

অনুরাগের কোনো রঙ হয় না, গ্রীষ্ম বলেছিল। প্রকৃতির বুকে বেজেছিল কথাটা। সে সাধনায় বসল। বর্ষার জল, শরতের উদাস আকাশ, শীতের হিম তার বুকের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে বয়ে গেল। প্রকৃতি বললে, এ নয়, এ নয়।

সন্ধ্যা আসন্ন। নদীর জলে অস্তমিত সূর্যের শেষ আলোর তরল স্পন্দিত রূপ। মন্দ বাতাস শিরীষ ফুলের গন্ধে প্রমত্ত।