বিশ্বনাথ ত্রিপাঠি। হিন্দি সাহিত্যের দিকপাল। তখন আর্থিক অবস্থা ভীষণ খারাপ। কোনোভাবে পড়াশোনা চালাচ্ছেন। বেণারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন পড়বেন। একজন পাঠিয়েছেন হাজারিপ্রসাদ দ্বিবেদির সঙ্গে দেখা করতে। ফাটা পায়জামা। ছেঁড়া চটি পরে এসেছেন তরুণ বিশ্বনাথ ত্রিপাঠি। মনে গভীর সংকোচ, কুণ্ঠা। হাজারিপ্রসাদের ঘরে এসে মেঝেতে বসেছেন এক কোণায়।
এখানে বলে রাখি, যদিও অনেকেই নিশ্চয়ই জানেন, তবু আমার তরুণ পাঠকদের জন্য বলি, হাজারিপ্রসাদ দ্বিবেদি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বহুদিন ছিলেন শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছাতেই কবীরের উপর লেখেন। হিন্দি সাহিত্যের সেই সময়ে তিনি সূর্যের মত ছিলেন।
যা হোক, তো ত্রিপাঠিজী এসে বসেছেন এক কোণায়। এমন সময় একজন অল্প বয়সী মেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে হাতজোড় করে নমস্কার জানিয়ে একটা মোড়া এগিয়ে দিয়ে বলেন, এখানে বসুন, মাটিতে বসেছেন কেন?
খানিকবাদে দ্বিবেদিজী আসেন ঘরে। বিশাল লম্বা মানুষ। ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত, সৌম্য রাশভারি ব্যক্তিত্ব। ত্রিপাঠিজী হিন্দি সাহিত্য নিয়ে ওঁর তত্ত্বাবধানে পড়ার আগ্রহ দেখান। উনি সম্মতি জানান। বলেন ভালো করে পড়শোনা করো ইত্যাদি ইত্যাদি।
ত্রিপাঠিজী কথা শেষে উঠলেন, ওঁকে প্রণাম করে বাইরে এসেছেন, এমন সময় উনি আবার ডাকলেন। ত্রিপাঠিজী ফিরে গেলেন। দ্বিবেদিজী ওঁর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, খিদে পেয়েছে কী?
সাক্ষাৎকার অনেক শুনেছি। আজকাল তো পডকাস্ট বলা হচ্ছে। সাক্ষাৎকারের থেকে আরেকটু বেশি কিছু যেন। কিন্তু এমন সাক্ষাৎকার আমার অভিজ্ঞতায় প্রথম। দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। কিন্তু আমি তাও শেয়ার করলাম। সাহিত্য শুধু না, একজন সংবেদনশীল মানুষ তার বিচারে, ভাবনায় নিজেকে ও সমাজকে এত স্পষ্ট, এত স্বচ্ছ এত বয়সে কীভাবে রেখে গেলেন আশ্চর্যের। শ্রদ্ধার। নিজের দোষ ত্রুটিকেও কী নির্মোহতে দেখলেন, দেখালেন সবার সামনে। কোনো কৃত্রিমতা নেই, কিন্তু কী মার্জিত। সৎ।
এ সাক্ষাৎকারটা বই হয়ে বেরোবে কিনা জানি না। তবে মনে হয় বেরোনো উচিৎ। অঞ্জুম শর্মার অত্যন্ত রুচিশীলতাও এখানে অবশ্যই উল্লেখ্য।
অঞ্জুম শর্মা জানতে চাইলেন দ্বিবেদিজীর কাছে সব চাইতে মূল্যবান শিক্ষা কী পেয়েছেন?
ত্রিপাঠিজী বললেন, যে তোমার বিরোধিতা করছে সে তোমার শত্রু না। সে তোমার থেকেও বেশি সৎ, আন্তরিক হতে পারে। তুমি দুনিয়ার শেষ ও একমাত্র সৎ, আন্তরিক বিদগ্ধ মানুষ নও।