Skip to main content

 

007.jpg

তিনি শুধু বলতেন না, করতেন। শিক্ষাকে কীভাবে জনসাধারণের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া যায়, সে নিয়ে ভাবনা ওঁর বহু প্রবন্ধে আছে। শুধু সে ভাবনা না, তাকে কীভাবে বাস্তবায়িত করা যায় সেও দেখিয়েছেন।

কবি হয়ে লিখছেন, "গল্প এবং কবিতা বাংলা-ভাষাকে অবলম্বন করে চারি দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত মনে মননশক্তির দুর্বলতা এবং চরিত্রের শৈথিল্য ঘটবার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠছে। এর প্রতিকারের জন্যে সর্বাঙ্গীণ শিক্ষা অচিরাৎ অত্যাবশ্যক। বুদ্ধিকে মোহমুক্ত ও সতর্ক করবার জন্য প্রধান প্রয়োজন বিজ্ঞান-চর্চার।"

এ কথা 'দ্য রিপাবলিক' নামক মহাগ্রন্থে প্লেটো সক্রেটিসের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন। কিন্তু তিনি দার্শনিক, এ কথা বলা সোজা। কিন্তু কবি হয়ে বলা ভীষণ কঠিন। রবীন্দ্রনাথ পারতেন।

আজও এ শিক্ষা দরকার। ভীষণভাবে দরকার। বিজ্ঞানশিক্ষা না পেয়ে কুসংস্কারাচ্ছন্ন হওয়া এক, আর বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে কুসংস্কারের নানা ন্যারেটিভ ভয়ংকর। সায়েন্টিফিক টেম্পারামেন্ট আর সায়েন্সে ডিগ্রি যে এক জিনিস না আমাদের সমাজে ঘরে ঘরে পাড়ায় পাড়ায় তার উদাহরণ। উন্মুক্ত, উদার যুক্তিবুদ্ধির আলোয় জানলে তবে জানা যায়।

ভারতের ইতিহাস মিশ্রণের ইতিহাস। প্রাক বৈদিক যুগের আদিবাসী থেকে শুরু করে পাশ্চাত্যের নানা অভ্যাস, সংস্কৃতি আজও মিশে চলেছে সবার অলক্ষ্যে - একই সভ্যতায়। অবশ্যই জটিল। ভীষণ জটিল। শবরদের দেবতা কী করে জগন্নাথ হলেন, লিঙ্গপুজা কী করে এলো, তান্ত্রিক দেবীরা কী করে হিন্দুধর্মে এলেন, ধর্মঠাকুর কে, এছাড়াও আমাদের সমাজের নানা আচারনিয়ম কোন প্রাচীন কালের কোন সভ্যতার ধারা বহন করছে, তা কী অতই সহজ জানা? সত্য মোহমুক্ত করে। মোহমুক্ত হলে সত্যের কাছাকাছি আসা যায়। এ মোহমুক্তির সাধন কি একদিনের সাধন? আজীবনের সাধন। রবীন্দ্রনাথ সে যজ্ঞের এক মহাবেদী স্থাপন করেছেন। সে যজ্ঞের আহূতিকে জাগিয়ে রাখার দায় আমাদের সবার। যজ্ঞের কাষ্ঠ নিয়ে আসার দায় সবার। যার হাতে যতটা ধরে।