Skip to main content

 

আমার পরিস্থিতির জন্য আমি দায়ী নই। আমার ভাবনার জন্যে আমি দায়ী নই। আমার প্রতিক্রিয়াগুলোর জন্যেও আমি দায়ী নই। আমিই আমার জন্য দায়ী নই। আমি ভালো হতে চেয়েও ভালো হতে পারলাম না। এটাই শুধু সত্য। বাস্তব।

নোটপ্যাডে নীল কালিতে লেখা। পাখাটা ফুল স্পিডে ঘুরছে। উপুড় হয়ে শুয়ে মানুষটা। বয়েস পঁয়ত্রিশের আশেপাশে। কালো হাফপ্যাণ্টের পকেটে একটা সিগারেটের প্যাকেট। মেঝেতে ছড়িয়ে ঘুমের ওষুধের শূন্য পাতাগুলো - ক্রুর হাসি হাসতে হাসতে বলছে, মেরে দিলাম।

=======

মরার কথা ছিল। সবারই থাকে। সবারই নিজের মরার পদ্ধতি নিয়ে একটা না একটা ভাবনা থাকে। এরও ছিল। কোনো একদিন জ্যোৎস্নার রাতে পুরুলিয়ার কোনো জঙ্গলে মরে পড়ে থাকতে চাইত। এটা পুরুলিয়া না। শ্যামনগর। গতকাল যখন ও ওষুধগুলো ছিঁড়ছিল, তখন কৃষ্ণপক্ষের দ্বিতীয় রাত।

======

দাহ হয়ে যাওয়ার পর এ ঘরটায় কেউ থাকতে চাইল না। যদিও এ বাড়িতে ঘর পাওয়া শক্ত। প্রায় গোটা বাড়িটাই ভাড়াটিয়ারাই থাকে। একদম উপরে তিনতলায় মালিক থাকে। ষাট ছুঁই ছুঁই একজন মানুষ। অবিবাহিত। সে চিন্তায় পড়ল, কারণ ভাড়াটিয়া ছাড়া একটা ঘর মানে আর্থিক ক্ষতি। অর্থ, জীবনের সত্যের নিয়ামক।

======

নিজের ঘরটা ছেড়ে এ ঘরে এসে থাকা শুরু করল। এ ঘরটা একতলায়। বৃষ্টি হলে উঠান থেকে কেঁচো ঢোকে। বেশি বৃষ্টি হলে জলও ঢোকে। নিজের ঘরটা ভাড়া দিয়ে এ ঘরে এসে উঠল।

======

ঘরটায় কীসের একটা যেন মায়া। দিন দশেক পর বুঝল যে মানুষটা আত্মহত্যা করল, এবং যাকে তার বোনেরা এসে দাহ করে চলে গেল, সে এ ঘরেই থাকে। জানলার নীচে যে ছোটো খোপ মত করা, যেখানে দুটো বড় বড় সুটকেস ঢুকে যায়, সেইখানে থাকে। রাতে বেরিয়ে আসে। জানলার ধারে দাঁড়িয়ে থাকে। ভোর হয়। আবার খাপে ঢুকে যায়।

====

তুমি মরলে কেন?

তুমি বেঁচে আছ কেন?

=======

তোমার অতীতের কথা মনে পড়ে? ফেলে আসা সময়ের কথা?

তোমার ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই তোমার। তুমি তাও মানো না। মানতে চাও না।

======

নেশা ছিল কোনো?

ছিল। যা যা ভাবতে পারো।

আমার নেশা নেই কোনো।

তাতে কি কিছু পার্থক্য হয়েছে?

না।

তবে?

=====

এভাবে মরলে কেন?

তুমিও বা এ ভাবে বেঁচে আছ কেন?

======

ভালোবেসেছিলে?

জীবন নিয়ে ঝুলন ঝুলন খেলেছিলাম কিনা? খেলেছিলাম।

তারপর?

সব ঝুলনের যা হয়। শেষ হল ধীরে ধীরে। ভাঙা ঝুলনে হতাশার আঁচ লাগল। ধোঁয়া ধোঁয়া হল সব।

একই সব। এক।

=======

তুমি কোনো কিছুর দায়িত্ব নাওনি কেন?

মৃত্যুর দায় নেব বলে।

কিন্তু যা কিছু সিদ্ধান্ত তোমার। যা কিছু করেছ, বলেছ সে সবের দায়িত্ব নেই তোমার। নেবে না বললেই কী চলে? এ কী করে হয়?

কী করে হয়?....সে জানার দায়ও আমার নেই। শুধু জানি আমি করে গেছি, আবেগে, বুদ্ধিতে, কারোর কথা শুনে….এর কোনোটাই আসল আমি নই। আসল আমি সে, যে শুধু ভুগেছে….নিজের ভুল আর অন্যের ভুলের মাশুল যে দিয়ে চলেছে দিনরাত…

আমিও তো……

======

তোমাকে কোনো প্রশ্ন করার নেই আমার আর।

কোনোদিনই ছিল না। ওগুলো সাফাই ছিল। সব জানতে তুমি। আমার মুখ থেকে শুনে নিজের কাছে নিজেকে সাফাই দিলে। এ ভয় কাটবে যেদিন সেদিন তুমিও এদিকে।

=======

উনি ঘর থেকে বেরোনো প্রায় ছেড়ে দিলেন। এমনকি মারা যাওয়ার অনেক পরে বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়ারা টের পেয়েছিল। পচা গন্ধে। তারা ভুলেই গিয়েছিল ও ঘরে কেউ আছে। মারা যাওয়ার পর মাথার কাছে একটা কাগজের টুকরো পাওয়া গিয়েছিল। তাতে লেখা….

“যে তুমি পড়ছ। তুমি জানো কেন পড়ছ। কৌতুহলে। কোথাও মনে মনে আমাকে সাহসী ভাবছ। তুমিও আটকে গেছ। সরল, সহজ জীবনের স্মৃতি আর জটিল জীবনের অলিগলি - দিক পাচ্ছ না, হিসাব পাচ্ছ না। ভাবছ মরাটা ভীষণ সহজ। না, ভুল ভাবছ। পারলে নিজেকে ক্ষমা কোরো। তারপর চাবিগোছা ফিরিয়ে বেরিয়ে এসো। হয় তো হাতে এখনও সময় আছে কিছুটা বাকি। নিজের মত করে খরচা করার। বেরিয়ে এসো।”