Skip to main content

 

001.jpg

আজ থেকে একশো বছর আগে আমেরিকায়, জন টি স্কোপস নামে একজন শিক্ষকের নামে মোকদ্দমা হয়েছিল। কেন? কারণ উনি টেনেসির ডেটনের একটা স্কুলে বায়োলজি ক্লাসে ডারউইনের অভিব্যক্তি তত্ত্ব পড়িয়েছিলেন বলে। ব্যস, খ্রীষ্টধর্মের ধ্বজাধারীরা সব্বাই রেগে আগুন। সে মামলা আমেরিকায় বড় বড় সংবাদপত্রজুড়ে ছাপা হতে শুরু করল শুধু না, রেডিওতে ধারাবিবরণী পর্যন্ত হল। কেন বাইবেলের নিয়ম উপেক্ষা করে উনি ক্লাসে ওইসব পড়াবেন? মামলা চলেছিল ১৯২৫ সালের ১০ই জুলাই থেকে ২১শে জুলাই অবধি। মামলার ফল কী হল? সে শিক্ষক বেচারা হেরে গেলেন। ১০০ ডলার জরিমানা হল। সে আইন কবে বদলালো? ১৯৬৭ সালে। তদ্দিন ওখানে স্কুলে ওসব পড়ানোর বেজায় ঝক্কি ছিল। স্কুলপাঠ্য থেকে ডারউইন, অভিব্যক্তি সব হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখানেই শেষ না। ১৯৬৮ সালে সুজান ইপারসন নামে আরেকজন বায়োলজি শিক্ষিকা আমেরিকার আর্কানসাসে একই আইনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন। সেখানে অবশ্যি সুপ্রিমকোর্ট বিজ্ঞানের পক্ষে রায় দেন। ডারউইনের অভিব্যক্তিবাদ জিতে যায়। বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্ব হেরে যায়। কিন্তু এই ঘটনাটা স্কোপসের মত আমেরিকায় আলোড়ন সৃষ্টি করে না। স্কোপসের ট্রায়ালে একশোর উপর সাংবাদিক কোর্টচত্বরে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকত, ভাবা যায়? কারণ? কারণ সেখানে যে দুজন আইনজ্ঞের মধ্যে সংঘাত তারা ছিল কেউকেটা লোক। ক্ল্যারেন্স ডারো ছিলেন যুক্তিবাদী মানুষ। যিনি স্কোপসের হয়ে লড়েছিলেন। আর অন্যদিকে উইলিয়াম ব্রায়ান, যিনি তিন তিনবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়েছিলেন এবং তীব্রভাবে খ্রীষ্টধর্মের এইসব তত্ত্বের একজন খ্যাতনামা পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। অর্থাৎ মামলাটা স্কোপসকে ছাড়িয়ে বিজ্ঞান বনাম ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কথিত আছে স্কোপস কোর্টে হাজিরা দেওয়ার আগেই নাকি এক আধবার ট্রায়াল শুরু হয়ে গিয়েছিল।

আমাদের দেশের কী হাল? এদ্দিন তো তাও পোলাপানেরা ডারউইন তথা অভিব্যক্তিবাদ পড়ে আসছিল। কিন্তু কোভিডের পর হঠাৎ আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষাবিদদের মনে হল মানুষ যখন সৃষ্টি হয়েই গেছে, আর তেমন কিছু বদলাচ্ছেও না, তখন আর ওইসব পড়িয়ে লাভ কী? ফেলে দাও, ফেলে দাও….করেছ কী…..এত কে পড়বে? এই বলে বিরিঞ্চিবাবার মত সব বাদ দিয়ে দিল। অর্থাৎ যে ছাত্রটি সিবিএসই বোর্ডে মাধ্যমিক দেবে, সে কোনোদিন ডারউইন তথা এ জগতের সৃষ্টিতত্ত্ব বৈজ্ঞানিক মতে জানতেই পারবে না, যদি না সে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নেয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ হয়নি? হয়েছে। মায় ১৮০০জন বিজ্ঞানী চিঠি লিখে বললেন অভিব্যক্তিতত্ত্ব না জানা মানে তো বোধগত পঙ্গু হয়ে যাওয়া। এতবড় সব্বোনাশ করবেন না!! দেশে দুকোটি ছেলেমেয়ে যদি আপনাদের বোর্ডে পড়ে তবে তাদের কী হাল হবে?

কিন্তু কে শোনে কার কথা। অতীতে মনু ছিলেন, ব্রহ্মা ছিলেন আর ছিলেন আদম ইভ! যা! গুলিয়ে গেল। অতীতে কে ছিল? কারা ছিল? মহাশূন্য থেকে খিলখিল হাসি উঠল….. বোকা কোথাকার! ঘুমা! খালি আগডুম বাগডুম প্রশ্ন!

002.jpg

[20 June 2025]