Skip to main content

আমি এলাম

আমি এলাম
- এসো
- তুমি কি ব্যস্ত?
- আমি ব্যস্ত থাকি না
- আমি নাস্তিক
...

যানজট

যানজটের কোনো উদ্দেশ্য নেই, অর্থ নেই। তবু হয়। এরকম অনেকগুলো অর্থহীন যানজট পেরিয়ে, কিছু যানজট এড়িয়ে একটা বিস্তীর্ণ মাঠে এসে বসলাম। আকাশ আর মাটির কোনো তাড়া নেই। ওরা দুজনেই সময়কে কোলেকাঁখে করে বেড়িয়েও যেখানে সেখানে নামিয়ে রেখে যায় অবহেলে। আজও নামিয়ে গেল আমারই চোখের সামনে। সময় আমার সামনে দাঁড়াল কয়েকটা ইতস্তত শরতের মেঘ আর বর্ষার মেঘের দাবার ঘুঁটি সাজিয়ে, আকাশের মেঝেতে। কে চেকমেট হল? বর্ষা না শরৎ? 
...

প্রতিশব্দ আছে, শব্দ নেই

আমার বাথরুমে সাবান, ফিনাইল, ব্লিচিং, কমোড - সবার গায়ে ইংরাজি লেখা। কারণ আমি একজন বহুভাষী দেশের নাগরিক।
আমার বসার ঘরে শোয়ার ঘরে ফ্যানের গায়ে, টিভির গায়ে, কম্পিউটারের গায়ে, বইয়ের মলাটে প্রকাশকের নামে, ক্যালেণ্ডারে, আলমারির চাবির সংখ্যায়, এমনকি ঠাকুর ঘরের ধূপের প্যাকেটে ইংরাজি অক্ষরমালা ছড়িয়ে। কারণ আমি একজন বহুভাষিক, উন্মুক্ত বাজারি সভ্যতার নাগরিক।
...

প্রবঞ্চক

প্রতিটা শব্দের অর্থ অভিধান দেখে আলাদা করে বুঝে নিই। যাতে সে শব্দের সোজাসুজি অনুভবকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়ে বলতে পারি, তুমি ভুল শুধু নও, প্রবঞ্চক!
...

তুমি থাকবে না

মাটিতে সুর আছে। জলেতে ছন্দ আছে। আকাশে বিশ্বাস আছে। বাতাসে ইচ্ছা আছে। আগুনে আনন্দ আছে।
একদা এক কালে সামগান ছিল। একদা এক কালে মৈত্রী-করুণা-নির্বাণ ছিল। একদা এক কালে আজান ছিল। একদা কালে ওয়াহে গুরু ছিল।
একদিন মাটি ভেঙেছিল। একদিন নদী ভেঙেছিল। একদিন হৃদয় ভেঙেছিল। একদিন বিশ্বাস ভেঙেছিল। একদিন মানুষ ভেঙেছিল।
...

ডালপালা

ডালপালা সরিয়ে একটা ছোটো পাখি উঁকি দিয়ে গেল। কি পাখি বলতে পারব না। ডালপালা সরিয়ে আবার বেরোবে কিনা অপেক্ষায় আছি। ডালপালা সরিয়ে খুঁজতে যেতে ভয়, যদি উড়ে যায়!
দিন গড়িয়ে বিকাল হল। সন্ধ্যা হব হব। সন্ধ্যার আকাশে ঘরে ফেরা পাখির ঢল, তা দেখতে দেখতে বিভোর হলাম। পাখির সংখ্যা গুনতে গিয়ে আঙুলের কড় হারালাম। গতিপথ বুঝতে দিক হারালাম। হঠাৎ মনে এলো ডালপালার আড়ালের পাখিটার কথা। পাখিটা কি উড়ে গেছে? ওই ঘরে ফেরা পাখিদের মধ্যে কি ছিল ও? ডালপালা সরিয়ে দেখতে ভয়, অপেক্ষায় উদ্বিগ্নতা এখন।
...

রসবোধ

শিল্পী বসলেন। তানপুরা বাঁধা হল। তিনি গান শুরুর আগে বললেন, আমি কিছু বলতে চাই শুরুতেই। সবাই উৎসুক, গানের আগে শিল্পী কথা বলবেন? এতো দারুন, জনসংযোগ, এরকম বিদেশেই দেখা যায়, কি বলেন? আশেপাশের সব লোক বলল, বটেই তো, বটেই তো।

নিরাশ্রয় চোখদুটো

নিরাশ্রয় চোখদুটো তুলে বললেন, ও মারা যাওয়ার পর দিশেহারা হয়ে গিচি, ছেলেটা বাইরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে, শুনেছেন হয়ত।
নিরাশ্রয় নিঃসঙ্গ চোখ দুটো তুলে বাড়িটা দেখালেন, বাড়ির কাজটা সম্পূর্ণ করচি। ওর ইচ্ছা ছিল দোতলার। সাইকেলে ঝোলানো ব্যাগে তরকারি। বললাম, এই দুপুরে বাজার?
শুধু এই রবিবারটাই করি। ওতেই হপ্তা চলে যায়। ছেলেটা আসলে অবিশ্যি...একলা ফেলে চলে গেল..কাল ঢালাই... শরীর ভেঙেছে। চশমাটা নাকের গোড়ায়, মোছা হয় না। প্যান্টটা কোমর থেকে নীচে নেমে যাচ্ছে বারবার। তুলে নেওয়া অভ্যাস হয়ে গেছে।
...

কবিতা নয়

ধর্ম সংবেদনশীল। ধর্ষণ নয়। ওটা নিয়ে কথা চলুক। আগেরটা নয়। অন্ধ বিশ্বাস? না তো, কিছু সহজ সরল মানুষের বিশ্বাস। যা তাদের নাকি শান্ত রেখেছে। নাকি তাদের আত্মমগ্ন রেখেছে। নাকি তাদের আশায় রেখেছে। দুষ্টুমি তো করে দুষ্টু লোকেরা।
ঈশ্বর কথাটা সংবেনশীল। ধর্ষণ নয়। ওটা নিয়ে কথা চলুক। অন্ধ বিশ্বাস? না তো, বহু মানুষের জীবিকা শুধু না, চিন্তাশূন্য, প্রশ্নশূন্য, ফার্নেস মস্তিষ্কের চিরাগ।
...

অভিসার

        অবশেষে বর্ষা এলো। আজ থেকে যাও। আমায় একবার আজ ছাদে নিয়ে যাও। সিঁড়ির ঘরের দরজার সামনে আমার হুইলচেয়ারটা রেখো। হাত বাড়িয়ে সিঁড়ির ঘরের কার্ণিশ চোঁয়ানো জল এসে পড়ুক আমার হাতের তালুতে। হাতের তালুর ভাঁজে ভাঁজে বৃষ্টির জলের নদী।

        আমি জানি আকাশটায় আজ কাল পরশু মেঘ থাকবে। আমি জানি সারা সপ্তাহ মেঘ থাকবে। আমি জানি সারা মাস মেঘ থাকবে, যতদিন না কাশ এসে বলে, এবার তোমার ছুটি। মিনতি বৌদি আবার চীৎকার শুরু করবে কাল থেকে, “কাচা জামাকাপড়গুলো কোথায় মেলব? আমার মাথায়?... কি গন্ধ হয়েছে... একটাও শুকালো না... কবে যে সুয্‌যের মুখ দেখব?”... সেই মিনতি বৌদিই দুপুরবেলা “শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা” গাইবে... ছায়া ঘনাইছে বনে বনে... গাইতে গাইতে কাঁদবে... তুমি রাতে কান পাতলে শুনবে আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার..... আসলে সব মানুষই তো অভিসারে যেতে চায়... ক'জন যেতে পারে বলো?... আমার সন্দেহ হয় রাধাও কি পেরেছিল... একটা মেয়ে এত ভালোবাসা সারাজীবন কোনো পুরুষের পায়?... রাধা পেয়েছিল?... ওই মেঘ সেই পুরুষ... রাধা কি তবে ওই সবুজ মাঠ?... এই কি অভিসার!
...
Subscribe to গদ্য কবিতা