Skip to main content

001.jpg

উপনিষদে একটি গল্প আছে—দুই পাখির। এক পাখি একদম মগডালে বসে—শান্ত,আত্মসমাহিত। আরেকটি তার নিচে—ডাল থেকে ডালে লাফিয়ে বেড়ায়, নানা রকম ফল খায়। মিষ্টি ফলে নেচে ওঠে, টক ফলে মুখ বাঁকায়। তবু প্রতিটি অভিজ্ঞতার পর সে ধীরে ধীরে উপরের সেই স্থির পাখির দিকে এগিয়ে যায়। এই গল্প এক গভীর দর্শনের কথা বলে—সংযম, মন নিয়ন্ত্রণ, ও আত্মদর্শনের পথ।

কিন্তু আজ আমি এই গল্পটিকে একটু অন্য চোখে দেখি যদি।

ভেবে দেখো—আমরা কেন টককে টক বলে চিনি?

কারণ আমাদের জিভে এক বিশেষ রিসেপ্টর আছে—ইংরেজিতে যাকে বলে receptor। এই রিসেপ্টরের নাম OTOP1। মজার বিষয় হলো, এই একই OTOP1 জিন আমাদের কানের মধ্যে ওটোকোনিয়া নামে ক্ষুদ্র ক্যালসিয়াম কার্বোনেট কণিকা তৈরি করে—যা আমাদের দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যেন চুনের গুঁড়োর মতো সাদা স্ফটিক—শরীরের জৈবিক ভারসাম্যের এক নীরব কারিগর।

এবার আরও এক আশ্চর্য তথ্য বলি—

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কিছু পাখি—বিশেষ করে সানবার্ড—টকের স্বাদই পায় না। কারণ, তাদের OTOP1 প্রোটিনে G378 নামে একটি অ্যামিনো অ্যাসিড আছে, যার জন্য তারা টক স্বাদ অনুভব করতে পারে না। এ পরিবর্তন এসেছে হাজার হাজার বছরের বিবর্তনে।

তাহলে এতে লাভ কী হলো পাখির?

▪️ তারা টক ফল বেছে ফেলে না—যা আমরা বা অন্য স্তন্যপায়ীরা খেতে চাই না, পাখিরা দিব্যি খায়।

▪️ খাওয়ার পর সেই টক ফলের বীজ তাদের মলের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে নতুন জায়গায়, আর সেখানেই গজিয়ে ওঠে নতুন গাছ।

একদম প্রকৃতির নিজের “ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল” যেন!

এখন উপনিষদের গল্পে ফিরি।

যে পাখি ধীরে ধীরে ওপরে উঠছে, টক-তেতো ফল খেয়ে অভিজ্ঞতার পথে উঠে যাচ্ছে, সে কি তাহলে সহ্যশক্তিতে পারদর্শী হয়ে ওঠা পাখি? আমাদের সমাজ তো কটুত্বে ভরা—কেউ একটু কড়া কথা বললেই আমরা জ্বলে উঠি বা ভিতরে ভিতরে ক্ষতবিক্ষত হই। আমাদের সেই “টক সহ্য করার” ক্ষমতাটা কি তবে জিনতাত্ত্বিক বিবর্তন ও মানসিক সংযমের এক যোগফল?

দক্ষিণেশ্বরের ঠাকুর বলতেন—

“সয়ে যাও, সয়ে যাও। যে সয়, সে রয়।”

কি আশ্চর্য! পাখিরা যেন আজ সেই কথারই প্রমাণ। উপনিষদের যুগেই হোক বা আধুনিক জেনেটিক্সের যুগে—সহনশীলতাই হল উপায়।

 

[21 June 2025]