Skip to main content

 

001.jpg

 

(ভেলোর হাসপাতালের থেকে মাঝে মাঝে নানা বিষয়ে মেল পাই। এ কথাগুলো মনে হল সবার সাথে শেয়ার করা যেতে পারে।)

ডাঃ মেরি ভার্গিজ (১৯২৫ - ১৯৮৬) ছিলেন এমন এক দুর্জয় ও অসাধারণ সাহসী চিকিৎসক, যিনি ভারতে রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসার পথ খুলে দেন। সিএমসি ভেলোর থেকে এমবিবিএস করার পর তাঁর স্বপ্ন ছিল গাইনোকলজিস্ট হওয়া। এই প্রসঙ্গে মনে আসে আরেক কিংবদন্তি নাম—ইডা স্কাডার (১৮৭০ - ১৯৬০)। একসময় "পুরুষ চিকিৎসকের স্পর্শ নিষেধ" কুসংস্কারের কারণে তিনজন গর্ভবতী নারী মারা যান ইডার চোখের সামনে। সেই শিশু ইডা বড় হয়ে ডাক্তার হন, ভারতে ফিরে গরুর গাড়িতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ডেলিভারি করাতে শুরু করেন। দুটো ঘর নিয়ে গড়ে ওঠে ছোট্ট হাসপাতাল। আজকের বিখ্যাত CMC Vellore, যেখানে এখন প্রতিদিন প্রায় ৯,০০০ রোগী OPD-তে আসেন।

কিন্তু মাত্র ২৯ বছর বয়সে মেরির জীবনে ভয়ানক এক দুর্ঘটনা—একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মেরুদণ্ডে চোট লাগে, এবং তিনি পঙ্গু হয়ে যান। তবু হার মানেননি। চেয়ারে বসেই, ডাঃ পল ব্র্যান্ড-এর তত্ত্বাবধানে হাতের অপারেশনের প্রশিক্ষণ নেন। এভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্বের প্রথম ‘হুইলচেয়ার সার্জন’।

এখানে ডাঃ পল ব্র্যান্ডের (১৯১৪ - ২০০৩) কথাও বলা দরকার। তিনি ছিলেন ভারতে কুষ্ঠরোগ চিকিৎসার অগ্রদূত। সমাজের ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে তিনি দেখিয়েছেন, ব্যথা অনুভব না থাকার কারণেই কুষ্ঠরোগীরা নিজের অজান্তেই নিজেদের ক্ষতি করে। তিনি বলতেন—"ব্যথা এক আশীর্বাদ"। তাঁর হাত ধরেই টেনডন রিপ্লেসমেন্ট, পুনর্গঠন সার্জারির পথ খুলে যায়।

ডাঃ মেরি নিউ ইয়র্কে আরও প্রশিক্ষণ নিয়ে ভেলোরে ফিরলেন। গড়ে তুললেন ভারতের প্রথম Physical Medicine and Rehabilitation বিভাগ। তিনি তৈরি করলেন সাশ্রয়ী সহায়ক যন্ত্রপাতি, চালু করলেন প্রতিবন্ধীদের কর্মশিক্ষা ও ক্রীড়া কার্যক্রম। ১৯৭২ সালে, তাঁর অনন্য অবদানের জন্য ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী প্রদান করে।

আজ ডাঃ মেরি ভার্গিজের ১০০তম জন্মবার্ষিকী। CMC Vellore-এর রিহ্যাব ইনস্টিটিউট আজ spinal injury, stroke, amputation, cerebral palsy ইত্যাদির চিকিৎসায় দেশের অগ্রণী কেন্দ্র। তাঁর শান্ত, সাহসী, মমতাময় ও গাম্ভীর্যপূর্ণ জীবন আজও অসংখ্য তরুণ-তরুণীর অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছে।