ভালো মানে কি সব সময় ভালো? এই যে আমি বললাম, লোকটা ভালো জোর আঘাত পেয়েছিল। তার মানে কী ভালো?
এই কথা ভাবতে ভাবতে কিশোরী সব্জী বাজারে ঢুকল। সব্জীওয়ালা বলল, কী ডাক্তারবাবু ভালো তো সব?
কিশোরী হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। মাথা নেড়ে বলল, ভালো। তোমার এ নটেশাক ভালো?
বলতে বলতেই পাশ থেকে একজন এসে বলল, ডাক্তারবাবু, ভালো গরম পড়ে গেল, দেখেছেন। আর জানেন আমার বাবার পাইলসের ব্যথাটা ভালো বেড়েছে। একটা ভালো দেখে ওষুধ দিন না।
এবার কান্না পেয়ে গেল কিশোরীর। ভালো ব্যথায় ভালো ওষুধ! কী ভাষা রে বাবা!
কিশোরী বাড়ি ফিরল। বউ বলল, ভালো লোক তো তুমি! যাচ্ছ যে বলে যাবে তো.... রান্নাঘর থেকে এসে দেখি সদর দরজা হাঁ করে খোলা! বলি মাথাটা তো ভালোই বিগড়েছে দেখছি।
বাজারের থলে মেঝেতে রেখে সোফায় থেবড়ে বসে গেল কিশোরী। বলল, পাখাটা ফুল স্পিডে চালাও। এসিটা অন করো।
বউ বলল, কেন গো? কী হল?
কিছু না।
বউ বলল, শরীরটা তো ভালো বুঝছি না গো.....এ চন্নো....চন্নো...,,বাবার প্রেশারের যন্ত্রটা নিয়ে আয় তো।
চন্নো প্রেশারের যন্ত্র হাতে এনে বলল, বাবার কী হল?
বউ বলল, মাপ আগে।
ছেলে প্রেশার মেপে বলল, ভালোই তো আছে।
অমনি কিশোরী ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলল, আর ভালো ভালো বলিসনি....বলিসনি....
বউ বলল, ভালো হ্যাপা হল তো.....কী হল তোমার?
কিশোরী কাউকে কিছু না বলে বাথরুমে গিয়ে পাজামা পাঞ্জাবি খুলে শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে পড়ল। আর অমনি গান মনে এল…..”তুমিই ভালো হে তুমিই ভালো, সকল ভালোর সার/ তোমাকে নমস্কার হে পিতা, তোমাকে নমস্কার”। আবার কান্না পেল।
টাওয়েল জড়িয়ে বাইরে এল। খাটে বসে বলল, একটু চা দাও দেখি।
হঠাৎ ঘরে ছোটোবেলার বন্ধু নকুড় ঢুকে এল। বলল, কী রে, কেমন করছিস জয়ন্তী বলল। কী হয়েছে? ভাল্লাগছে না? যাবি নরেশ ডাক্তারের কাছে?
নরেশ ডাক্তার নকুড়ের শ্বশুর। কিশোরী হাত জোড় করে বলল, আমায় ছেড়ে দে তোরা!
নকুড় বলল, তোর ভালোর জন্যেই বলছিলাম….
কিশোরী বলল, আর না….আর না…আর না…..
নকুড় বলল, কী আর না…..
কিশোরী বলল, ভালো আর না….আর না ভালো….. ভাল্লাগে না ভালো আর…..
বউ দুই কাপ চা নিয়ে এসে বলল, ভালো মানুষটা বাজারে গেল….কী হল বলো তো…..
কিশোরী বলল, চুপ
ওরা বলল, ভালো জ্বালা!
কিশোরী বলল, আবার ভালো বলে!
ওরা বলল, ভালো বললে কী? ভালোকে ভালো বলব না?
কিশোরী বলল, না!
ওরা বলল, ভালো, আর ভালো বলব না! হল তো!
কিশোরী বলল, হ্যাঁ
ওরা বলল, বেশ সেই ভালো!