বানু মুশতাক আন্তর্জাতিক বুকার পুরষ্কার পেলেন। কন্নড় ভাষার লেখিকা। "হার্ট ল্যাম্প", গল্প সংকলনের জন্য পেলেন। আজ থেকে তিন বছর আগে হিন্দি ভাষার লেখিকা গীতাঞ্জলী শ্রী পেয়েছিলেন "রেত সমাধি" র জন্য।
প্রতিবছর কলকাতা বইমেলা, তথা ছোটো ছোটো বইমেলাতেও 'সাহিত্য একাদেমি'র স্টল থাকে। আমি আগেও লিখেছি, সেখান থেকে যদি একটা কী দুটো বই ভারতীয় অন্যান্য ভাষার কেনা যায়, দেখা যাবে কী অসামান্য কাজ ভারতের নানা প্রান্তে হচ্ছে। কিন্তু আমার কেন জানি ভয় হয় ক্রমশ হয় তো ভারতীয় ভাষার মধ্যে এই আদানপ্রদানের চেষ্টাটা হারিয়ে যাচ্ছে। আমার প্রতিবছর সাহিত্য একাদেমিতে ঢুকলেই ভয় হয়, বই কি কমে যাচ্ছে? নতুন বই কি আর অনুবাদ হবে না? ভারতে কোন প্রান্তে কী ধরণের লেখালেখির কাজ চলছে তার একমাত্র আমার কাছে জানার উপায় হল খবরের কাগজ। দ্য হিন্দু, দক্ষিণ ভারত কভার করে। উত্তর ভারতের জন্য অনেক কাগজ, দ্য হিন্দুস্থান টাইমস, টাইমস অব ইণ্ডিয়া তো আছেই। তাছাড়া দৈনিক জাগরণ, দৈনিক ভাস্কর, অমর উজালা ইত্যাদি আছে। উত্তর পূর্বের সাহিত্য নিয়ে খুব বেশি জানা যায় না।
ভারতীয় ভাষায় কোনো বড় পুরষ্কার অবশ্যই গর্বের আনন্দের। বানু মুশতাক লিখছেন, ধর্মীয় আস্থা সান্ত্বনা দেয়। কিন্তু সেই ধর্মীয় আস্থাকেই যখন অস্ত্ররূপে ব্যবহার করা হয় তখন তা শোষণ পীড়নের উপায়স্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। ধর্মের এই দুটো দিকের দ্বন্দ্বই আমার লেখার একটা বড় উপজীব্য। গীতাঞ্জলি শ্রী এর "রেত সমাধি" আর বানুর নানা লেখা সমাজে মেয়েদের অবস্থানের জটিল, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভবগুলোকে সংবেদনের আতসকাঁচে সামনে তুলে এনে দেখায়। দুটো আলাদা ধর্ম, সামাজিক রীতিনীতির প্রক্ষাপটে লেখা। কিন্তু আদতে তো মানুষের গল্প। বানুর ভাষায় মানুষের মধ্যে যাবতীয় বিভেদ সাহিত্যই দূর করে একে অন্যের অন্তর্লোকে প্রবেশাধিকার পেয়ে সাহিত্যিকের হাত ধরে।
বানু, অনেক অনেক অভিনন্দন।