অনুগল্প

"কর্তব্যটুকু করে যাই, তারপর যা হবার ঈশ্বরই জানবেন।"

    নার্সকে কথাটা শেষ বলেছিল। এই বাক্যটা বলে আসছে একত্রিশ বছর বয়েস থেকে। আজ এই চুয়াত্তর বছর দশমাস তিনদিনের দিন শেষবার উচ্চারণ করল। কথাটা বলে শুলো। আর জাগল না।

জয়দেব ভিজছেন। আষাঢ়ের প্রথম বর্ষা। চারদিক ঝাপসা হয়ে আছে। জয়দেব স্থির দাঁড়িয়ে। হাতদুটো বুকের কাছে জড়ো করা। জয়দেব তাকিয়ে শ্রীমন্দিরের দিকে। পতাকাটা আষাঢ়ের সজল বাতাসের দাপটে যেন সব ছিন্ন করে উড়ে যেতে চাইছে। জয়দেবের বুকের মধ্যেও যেন এক অবস্থা। জয়দেবের চোখের জল বর্ষার জলের সঙ্গে মিশে একাকার। যেমন নীলাচলে গলছে আষাঢ়ের আকাশ।

কিছু থাকে আলগা মানুষ। সারাক্ষণ তাদের আলগা কথা, আলগা ভাব, আলগা ভালোবাসা, আলগা হাসি-মজা। 

    আবার কিছু মানুষ থাকে নোঙর ফেলা। তাদের কথা গভীর, ভাব গভীর। কথা শুনলে বুকে ঠং করে লাগে। ভালোবাসা হাঁটুজলেই শেষ হয়ে যায় না। 

পুজোর প্যাণ্ডেলে বাঁধা বাঁশগুলো বিয়েবাড়ি হয়ে যখন গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠানে বাঁধা হচ্ছে, বাচ্চাটা চীৎকার করে বলে উঠল, বাবা এই সেই বাঁশটা দেখে যাও, যেটায় আমি আমার নাম লিখেছিলাম অষ্টমীর দিন, বুম্বা, এক রকম আছে। 

    তার ডাক কেউ শুনল না। ছেলেটা আবার নাম লিখল তিনবার, বুম্বা বুম্বা বুম্বা। কেউ দেখল না।

আমার বগল ঘামছে। এসি অন। হাতের মুঠোটা শক্ত করে আছি। এটা রিফ্লেক্স অ্যাক্সন। টেনশান হলেই আমার হয়। ট্রেনটা মিস হবে। যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস। ছাড়তে আর আধঘন্টা বাকি। কিন্তু যা জ্যাম, অসম্ভব। ফোন সুইচ অফ্ করে দিয়েছি। রেড্ডী অনেকক্ষণ ঢুকে গেছে স্টেশানে, আমি তখন বেলঘরিয়া ছাড়ছি। হাওড়া স্টেশানের পাশেই একটা হোটেলে ছিল। মনে হচ্ছে না পাবো। এমন জ্যাম যে আমি দরজাটাও খুলতে পারব না কোনোদ

সমস্যা হল মোমবাতিটা কোথায় রাখবে। কারেন্ট চলে গেছে। বাথরুমটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। এই সময়টা রোজ গা ধোয়া অভ্যাস। নইলে কে ঢোকে এই সময় এই অন্ধকারে।

ছেলেটা সাইকেলটা নিয়ে সরু গলির ভিতরে ঢুকেই গেল। এ গলিটায় আসার কথা ছিল না। গলিটার শেষে গঙ্গা, পাশে ইঁটভাটা। কিন্তু বুকের মধ্যে রাক্ষস ঢুকেছে। দু’হাতে বুকের ভিতরটা খামচে ধরে তাকে নাচাচ্ছে। পাগল হয়ে যাবে এক এক সময় মনে হয়। সাইকেলের হাতলদুটো শক্ত করে চেপে ধরে আছে, যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সোজা গঙ্গায় চালিয়েও ঝাঁপ দিয়ে দিতে পারে। এই এত নরকযন্ত্রণার কারণ কে?

কি বলব তোমাদের! আমি সেদিন মাস্কটাস্ক পরে, বাজার করে ফিরছি, হঠাৎ স্কুলের বাইরে দিয়ে যাওয়ার সময় শুনি কি হট্টোগোল! এদিকে আমি তো জানি সব স্কুলটুল বন্ধ। তবে? হঠাৎ করে সব খুলে গেল নাকি? তোমরা বললে বিশ্বাস করবে না, একটু উঁকি দিয়ে তাকিয়ে তো আমার চক্ষুচড়কগাছ!

এমনকি জগদীশ যখন ইতিমধ্যে মৃত স্ত্রী'র শরীরটা টুকরো টুকরো করছে, তখনও তার মনে হচ্ছে সে ঠিক করছে। ঝুম্পা যখন জগদীশের করাল মুষ্টির মধ্যে থেকে শ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করছিল তখনও জগদীশের মনে হচ্ছিল সে ঠিক করছে। 

মাছের বাজারে গিয়ে বুঝলেন গন্ধবোধটা তো একেবারে গেছে! এইবার?

    এক একটা মাছ এনে এনে নাকের কাছে ধরেন, শোঁকেন, রাখেন, ঘামেন, আবার মাছ ধরেন, তোলেন, শোঁকেন, ঘামেন, রাখেন।