Skip to main content

অদেয় ভালোবাসা

দু’জন মানুষ ঠিক করল, তারা ঘর বাঁধবে। যারা নিজেদের ঘরে তো জন্মেছিল, কিন্তু ঘর তাদের নিজেদের ভাবেনি। ছেলেটাকে তার বাড়ির লোক বলেছিল, দূর হ! মেয়েটাকে তার বাড়ির লোকে বলেছিল, দুচ্ছাই!

নিরুদ্দেশ

গোবিন্দের এই নিয়ে তিনটে রাত ঘুম হল না। ক্ষেতে যায়। গরুকে জাব দেয়। সন্ধ্যেবেলা তাস খেলতে বসে চণ্ডীমণ্ডপে। সব ঠিক আছে। কিন্তু মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা। বাঁ হাতের কব্জীর উপর এমন একটা ফুলো উঠছে। টিউমার। এই মাস গেলে বিয়ে। শাঁখা গলবে? কি যে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। 

কানে না, প্রাণে

গোঁসাই বলল, হৃদিযন্ত্র ধুলায় রেখেছো, হাটের মাঝে। যে পারে এসে তারে দেয় টোকা, দেয় টান। ওঠে শব্দ। সুর কই? রাতদিন যে যন্ত্র নিয়ে তত্ত্ব করো, সে যন্ত্র বাজবে কবে হে? 

     বললাম, সুর শিখিয়ে দাও। বাজাই। 

সিট ভেজানো লোকটা

প্রচণ্ড বৃষ্টি। রাস্তায় আটকে গাড়ি। জ্যাম। 

দরজায় ধাক্কা দিল। দাদা, একটু খুলবেন? প্লিজ!

কাকভেজা মধ্যবয়েসী লোক একটা। গাড়িতে এসে বসল। সারা গা চুঁইয়ে জলে ভিজছে সিট। 

সরি স্যার। আমায় হাস্পাতালে নাবিয়ে দেবেন একটু! আমার মেয়েটার অপারেশান! প্লিজ! 

ভবিতব্য

আগুন আলো দেবে বলে জ্বলে না। তার না জ্বলে উপায় নেই বলেই জ্বলে। সে জ্বলনে যদি আমি তাপ পেয়ে থাকি, আলো পেয়ে থাকি, সে নেহাতই একটা বাড়তি ঘটনা মাত্র। মূল ঘটনা না। মূল ঘটনাটা ওই জ্বলন। আগুন নিভলে তাই যতই অভিমান করি না কেন, আগুনের কাছে তা মূল্যহীন। সে জানেই না তার জ্বলে থাকার মূল্য আমার কাছে অন্যরকম ছিল। আমার ব্যবহারের ছিল সে। 

ছায়া আর স্ট্রিট লাইট

নুন-চিনি-জল খেয়ে চেয়ারে বসেই বুঝলেন, আবার যাওয়া লাগবে। 

     গেলেন। এলেন। ক্লান্ত। ডাক্তার বলেছে, এরকম হবে। কোভিডের নতুন লক্ষণ। আগে পেটে এরকম হলে একটা অনুশোচনা থাকত, আহা, ওটা বেশি খাওয়া হল, কি সেটা খাওয়া উচিত হয়নি। কিন্তু এতো আশ্চর্য কাণ্ড! কোথা থেকে কি হল! 

উভমুখী

কারাগার কি শুধু শিকলের হয়? মন নিজে যখন নিজেই নিজের কারাগার হয়ে ওঠে? কিছুতেই নিজেকে ঠেলে নিজের বাইরে যাওয়া যায় না? তখন? সেও এক দুঃসহ কারাগার।

কান্না ধন

গোঁসাই বলল, দেখ, মহাপ্রভু পেয়েছিলেন ডেকে, রামকৃষ্ণদেব পেয়েছেন কেঁদে। উনি তাই বলতেন না, কাঁদতে পারো? লোকে মাগ ছেলের জন্যে ঘটি ঘটি কাঁদছে। ঈশ্বরের জন্য, ভগবানের জন্য আর কে কাঁদছে বলো? 

     গোঁসাই বলে চলল, ঠাকুরকে যে ঠিক ঠিক ডেকেছে, ঠাকুর তাকে কাঁদিয়েছেন। 

     চমকে উঠে বললাম, একি বলো গোঁসাই… এ তো ভয়ের কথা….
...

রথ

স্থির রোদ। গাছের ছায়া লুটোপুটি খাচ্ছে মাটিতে। রোদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা। মাটি কোল পেতে বসে। 

     মাটি জানে খানিকবাদে রোদ থাকবে না, ছায়া থাকবে না। গাছটাও একদিন থাকবে না। সে থেকে যাবে। 

     গোঁসাই বসে গাছের তলায়। চাঁদের আলোয় ছায়ারা খেলছে। গোঁসাই এ ছায়া রোদের আলোতেও দেখেছে। চাঁদের আলোয় মায়া বেশি। সত্যে আর কল্পনায় মেশানো যে! রোদের আলো বড্ড স্পষ্ট। জ্ঞানের অহংকারের মত। জ্ঞানের চেয়ে জ্ঞানী বাজে বেশি। চাঁদের আলো অনুভবীর। সে অনুভবী জ্ঞানী রসের খবর জানে না শুধু, সে জ্ঞানী রসিকও। রসের সমঝদার!
...

স্বেদ

১২৫টা সিঁড়ি ভেঙে ওঠার পর, মন্দিরে শিবের মাথায় জল দেওয়ার পর, যখন ভক্তি, শান্তি না এসে শুধু তেষ্টা আর খিদে চাগাড় দিল, সন্ধ্যা বুঝল, এই চুয়াত্তরটা বছর ভগবান তাকে শুধু ঠকিয়েইছে। সে-ও ঠকিয়েছে বিস্তর। ভগবান আর তার মধ্যে সারা জীবন শুধু লুকোচুরি খেলাই হয়েছে। স্বামীকে ঠকিয়েছে, ছেলে-মেয়েদের ঠকিয়েছে, আত্মীয়-স্বজনকে ঠকিয়েছে। আর নিজেকে তো ঠকিয়েছেই। তারাও ঠকিয়েছে তাকে। 
    বিয়ের আগে আর পরে নিজেকে যখন দেখে, নিজেকে মনে হয় হরিদ্বারের গঙ্গা, আর কলকাতার গঙ্গা। না, শুচিতা-অশুচিতার ধার ধারেনি সন্ধ্যা কোনোদিন। তার শরীরে প্রথম খাবলা বসিয়েছিল তার ঠাকুর্দার ভাই, জগন্নাথ ভট্টাচার্য। সে-ই যখন পুজো-আচ্চাকে জীবিকা করে আশি বছর জীবন কাটিয়ে সজ্ঞানে মারা গেল, সন্ধ্যার বিশ্বাস হয়েছিল যে শুচি-অশুচি মানুষের। সে শুধু মেয়েমানুষের মনে ভগবানের ভয়ের শিকল পরিয়ে পোষ্য বানাবার কল বই আর কিছু নয়।
...
Subscribe to অনুগল্প